Site icon janatar kalam

প্রযুক্তিগুলিকে সতর্কতা ও সচেতনতার সাথে গ্রহণ করতে হবে: রাজ্যপাল

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নের গতি অভূতপূর্ব। যা প্রতি মুহূর্তে আমাদের জীবনযাত্রার রূপকে বদলে দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের এই প্রযুক্তিগুলিকে সতর্কতা ও সচেতনতার সাথে গ্রহণ করতে হবে। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে মহারাজা বীরবিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন সমারোহে একথা বলেন রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেডি নান্নু। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহাও। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতি টি. অমরনাথ গৌড়কে ডিগ্রি অব লিটারেচার (Honoris Causa) সম্মানে ভূষিত করা হয়।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যপাল বলেন, মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য ছিলেন সত্যিকারের এক প্রগতিশীল ব্যক্তি। যিনি বুঝতে পেরেছিলেন রাজ্যের ভবিষ্যৎ শিক্ষার আধুনিকীকরণের উপর নির্ভর করে। অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগেও মানবতাবাদ, সহানুভূতি, সৃজনশীলতা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে সমাজের নিকট মহামূল্যবান করে তোলে। তিনি বলেন, প্রযুক্তি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু শিখন দক্ষতা ও মূল্যবোধ চিরস্থায়ী থাকে। চেতনা, দৃঢ়তা, সমৃদ্ধ বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতিকে সঙ্গে করে রাজ্যের উন্নয়নে সকলকে কাজ করার জন্য রাজ্যপাল এই অনুষ্ঠানে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্য সরকার মহারাজা বীরবিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়কে সার্বিকভাবে গুণমানসম্পন্ন একটি উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।

তিনি বলেন, সমাবর্তন অনুষ্ঠান ডিগ্রিপ্রাপ্ত পড়ুয়াদের জীবনের একটি বিশেষ মুহূর্ত। প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা ঐতিহ্য রয়েছে। আগে বিদেশ থেকে পড়ুয়ারা আমাদের দেশের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে আসতেন। শিক্ষার এই ঐতিহা পুনরুদ্বারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দেশের ঐতিহ্যগত কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পরম্পরার উপর ভিত্তি করে দীর্ঘ বছর পর নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করা হয়েছে।

রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করা হচ্ছে। গণিত, বিজ্ঞান, যোগব্যায়াম এবং দর্শনশাস্ত্রে ভারতের অবদান এখনও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ এই গৌরবপূর্ণ ঐতিহ্যকে আধুনিক পাঠ্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এম.বি.বি. বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের উপর একটি কোর্স চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারের সুযোগ আরও প্রসারিত করতে এম.বি.বি. বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.বি.এ, এম.বি.এ, বি.সি.এ., এম.সি.এ, বি.এস.সি. এবং বায়োটেকনোলজিতে এম.এস.সি. কোর্স চালু করার পরিকল্পনার কথাও মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ.আই)-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার শিক্ষাকে আরও কার্যকর এবং সহজলভ্য করেছে। ইতিমধ্যে কলেজগুলির জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগ করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে নতুন কলেজ খোলা হচ্ছে। ছাত্রীদের জন্য টিউশন ফি মকুব করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা এবং মুখ্যমন্ত্রী যুব যোগাযোগ যোজনার মতো প্রকল্পও চালু করা হয়েছে। যোগ্য শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে স্কুটি বিতরণ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী ডিগ্রিপ্রাপ্ত পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বলেন, জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে পা রাখার সাথে সাথে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। তবে যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জীবনে এগিয়ে যেতে হবে। সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি বিনয়ী হওয়ার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিপ্রাপ্ত সকলের ভবিষ্যৎ জীবন ও প্রচেষ্টার সফলতা প্রত্যাশা করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এম.বি.বি. বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিভাস দেব। এছাড়াও শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভাল হেমেন্দ্র কুমার, এম.বি.বি. বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. সুমন্ত চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও পি.এইচ.ডি, স্নাতকোত্তর, স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্ত পড়ুয়া সহ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা পড়ুয়াদের উত্তীর্ণ হওয়ার শংসাপত্র প্রদান করা হয়। ১৩৫ জন কৃতীকে একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়। রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেডি নান্নু, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা সহ অতিথিগণ তাদের হাতে শংসাপত্র ও পদক তুলে দেন।

Exit mobile version