জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- কয়েকদিন ধরে চলা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রায় শান্ত হয়ে আসছে। দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে শান্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। ১০ মে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর রবিবার পর্যন্ত সীমান্তে কোনও গুলিবর্ষণ হয়নি। সোমবার (১২ মে) প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটাই জানালেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। গত ৭ মে পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত ৯ টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান।
এই হামলায় শতাধিক সন্ত্রাসীকে নিকেশ করতে সফল হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এরপর পাকিস্তান পাল্টা সীমান্তে হামলা চালায়। কিন্তু সেটাও প্রতিহত করে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী। টানা চারদিন এমনটা চলার পরে ১০ মে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সাক্ষর হয়। আজ এই চুক্তির শেষদিন। সন্ধ্যায় দুই দেশের DGMO-এর মধ্যে। সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আজ ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপরাশেনস-এর লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই, তাঁর পাকিস্তানের প্রতিপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এর আগে, ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্ত্রি বলেছিলেন যে, পাকিস্তানের DGMO মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লাহ ভারতের DGMO-কে ফোন করে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছেন।
সন্ধ্যায় বৈঠকের আগে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে ভারতের তিনবাহিনীর (নৌসেনা, বায়ু সেনা, স্থল সেনা) ডিজি অপারেশনস একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান যে, ‘আমাদের বিমানঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করা খুবই কঠিন। পাকিস্তান আমাদের গ্রিড সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারেনি। সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপের চরিত্রে পরিবর্তন আসছে। সন্ত্রাসীরা এখন আমাদের নিরীহ নাগরিকদের টার্গেট করছে।
যা ২০২৪ সালে জম্মুর শিবখোরি মন্দিরে আসা তীর্থযাত্রীদের উপর হামলা, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও-তে নিরীহ পর্যটকদের উপর হামলা এই বিপজ্জনক প্রবণতার সুনির্দিষ্ট উদাহরণ। কিন্তু পহেলগাঁও হামলায় তাঁদের পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে। আমরা জানি যে, পাকিস্তান আমাদের উপর আবারও আক্রমণ করবে। আমরাও প্রস্তুত। আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আমরা সীমান্ত অতিক্রম না করেই আক্রমণ চালিয়েছি। আমরা পাকিস্তানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ভূপতিত করেছি। তাঁরা আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা গ্রিড করতে পারেনি। আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আমরা পাকিস্তানের ড্রোণ ধ্বংস করে দিয়েছি। সীমান্তে ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক ক্ষতির জন্যে ওঁরাই দায়ী। আমাদের লড়াই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে, পাক সেনাদের সঙ্গে নয়।’
এরপর ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ বলেন, “আকাশসীমা-সহ অবিচ্ছিন্ন নজরদারি স্থিতিশীল করার জন্য সামুদ্রিক বাহিনী ব্যবহার করা হয়েছিল। নৌবাহিনী একই সঙ্গে আকাশ, ভূ-পৃষ্ঠের হুমকি সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। সামুদ্রিক বাহিনী অবিচ্ছিন্ন নজরদারি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। কার্যকরভাবে একাধিক সেন্সর এবং ইনপুট ব্যবহার করে আমরা অবিচ্ছিন্ন নজরদারি বজায় রাখছি। আমরা সর্বাধিক রাডার ব্যবহার করেছি এবং সমস্ত উড়ন্ত বস্তু, তা ড্রোন, যুদ্ধবিমান, যাই হোক না কেন, পর্যবেক্ষণ করেছি। আমাদের বিমানের পাইলটরা দিনরাত আমাদের বিমানে কাজ করছে।
আমাদের ভূখণ্ডের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কোনও শত্রু বিমান আসতে দেওয়া হয়নি। আমরা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী এবং বিমান-বিধ্বংসী প্রযুক্তি যাচাই করেছি। ভারতীয় নৌবাহিনীর আধিপত্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে আমরা চাইলে আমাদের ইচ্ছামতো আক্রমণ করতে পারি।” এর পর এয়ার মার্শাল এ.কে. ভারতী বলেন যে, ‘আমাদের সমস্ত সামরিক ঘাঁটি, সরঞ্জাম এবং ব্যবস্থা কার্যকর এবং প্রয়োজনে যেকোনও অভিযানের জন্য প্রস্তুত।’