জনতার কলম আগরতলা প্রতিনিধি :-দুর্গাপূজার মুখে রাজ্যের শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ফের সোচ্চার হয়ে উঠেছে বামপন্থী শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের নেতৃত্ব। ত্রিপুরা কর্মচারী সমন্বয় কমিটির তরফে আগামীকাল (১৪ সেপ্টেম্বর) পশ্চিম ত্রিপুরা এবং দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে। আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, যা রাজ্যের কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগগুলোকে সামনে তুলে ধরেছে।
সংগঠনের নেতাদের মতে, রাজ্য সরকারের উদাসীনতা এবং প্রতিশ্রুতি অমান্যের কারণে কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাঁদের প্রধান দাবিগুলো নিম্নরূপ:
– **শূন্য পদ পূরণ:** বিভিন্ন দপ্তরে শূন্য পদগুলিতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ করা হোক।
– **ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স (ডি.এ.):** শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্বের নিয়মানুসারে বছরে দু’বার (১ জুলাই এবং ১ জানুয়ারি) ডি.এ. প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি, বকেয়া ২৩ শতাংশ ডি.এ. অতিসত্বর পরিশোধ করা দরকার।
– **বেতন কমিশনের সুপারিশ:** প্রতিশ্রুতি অনুসারে কেন্দ্রীয় সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশগুলো কার্যকর করা হোক।
– **গ্র্যাচুয়িটি বৃদ্ধি:** গ্র্যাচুয়িটির পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা।
– **ডাই-ইন-হারনেস প্রকল্প:** এই প্রকল্পে পূর্বের নিয়মাবলী পুনর্বহাল করা হোক।
– **ফিক্সড পে কর্মচারীদের সুবিধা:** টি.আর.বি.টি.জে.আর.বি.টি. দ্বারা নির্বাচিত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরির প্রথম দিন থেকেই নিয়মিত বেতনক্রম প্রদান করা।
– **পদোন্নতির জটিলতা দূরীকরণ:** অ্যাড-হক প্রমোশনের সমস্ত জটিলতা দূর করে প্রতিটি দপ্তরে পদোন্নতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক। বিশেষ করে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি পদে কর্মরত কর্মীদের পদোন্নতি অবিলম্বে দেওয়া।
– **টিটিএএডিসি কর্মচারীদের সমান সুবিধা:** টিটিএএডিসিতে কর্মরত সমস্ত কর্মচারীদের একই হারে এবং একই সময়ে ডি.এ. সহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা।
– **আইন-শৃঙ্খলা ও নেশা নিয়ন্ত্রণ:** রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্তিশালী করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা করা। নেশা কারবারি এবং নেশা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
– **চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের পুনর্বাসন:** ১০৩২৩ জন চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের অবিলম্বে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এছাড়া, মৃত ১৯১ জন শিক্ষকের পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়া।
– **বিদ্যালয় সংক্রান্ত দাবি:** ‘বিদ্যাজ্যোতি’ নামে সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা মেনে নেওয়া যাবে না। ছাত্রসংখ্যা কম থাকার অজুহাতে কোনো বিদ্যালয় বন্ধ করা চলবে না।
– **বিদ্যুৎ নিগমের কর্মচারীদের সুবিধা:** ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের কর্মচারীদের জন্য সার্ভিস রুল অবিলম্বে চালু করা।
– **স্বাস্থ্য যোজনা:** মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার গাইডলাইন অতিসত্বর প্রকাশ করা সহ অন্যান্য দাবি।
সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, এই দাবিগুলো পূরণ না হলে আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে। গণঅবস্থান কর্মসূচিতে ব্যাপক সংখ্যক কর্মচারী অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের তরফে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি, তবে এই আন্দোলন পূজার মরশুমে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই ঘটনা ত্রিপুরার শিক্ষা ও কর্মচারী খাতের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলোকে আবারও সামনে তুলে ধরেছে, যা রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত।