Site icon janatar kalam

ছবি ছাপিয়ে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাওয়া নিয়ে সরব নীতিন গডকড়ি

জনতার কলম ওয়েবডেস্ক :- পোস্টার, হোর্ডিংয়ে ছবি ছাপিয়ে ভোটে জেতা যায় না। মানুষের মন পেতে জনসেবা করতে হয়,’ ক’দিন আগে রাজস্থানে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি ভৈরো সিং শেখাওয়াতের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বলেছিলেন কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকড়ি। এবার নিজের রাজ্য মহারাষ্ট্রে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘মাংস ভাত খাইয়ে, মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জেতা যায় না।ভোটে জিততে হলে কাজ করতে হয়।’শুধু এই দু’টি অনুষ্ঠানই নয়, গত দেড়-দু’বছরে দলীয়, সরকারি, বেসরকারি নানা অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার এই প্রবীণ মন্ত্রী এই একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে চলেছেন। স্বভাবতই দলের অন্দরে-বাইরে চর্চা শুরু হয়েছে গডকড়ি বারেবারে এই ধরনের কথা কেন বলছেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত হল, তিনি আসলে ঘুরিয়ে প্রধানমন্ত্রীকেই (Narendra Modi) ইঙ্গিত করছেন। মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অভিযোগে সরব বিরোধীরা। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে ‘আচ্ছে দিন’ আসবে দাবি করে বিজেপির প্রচারে বলা হয় বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধার করে দেশবাসীর মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হবে।২০১৯-এর ভোটে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসে কোটি কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে। বিরোধীরা মোদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অভিযোগ করে বারেবারে সরব হয়েছে। মোদীর আত্মপ্রচার নিয়েও সরব বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে অনেকের ব্যাখ্যা গডকড়ি আসলে প্রধানমন্ত্রীকেই কৌশলে নিশানা করে চলেছেন। মোদীর মতো গডকড়িও আরএসএসের প্রচারক ছিলেন। সঙ্ঘ পরিবার আত্মপ্রচারের বিরোধী। কর্নাটকে হারের পর আরএসএসের মুখপত্রে বিজেপিকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, মোদীর জনপ্রিয়তায় ভর করে লোকসভা নির্বাচন জেতা যাবে না।রাজস্থানে গডকড়ি মুখ খুলেছিলেন কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দু’দিনের মাথায়। সদ্যই কর্নাটক বিজেপির হাত ছাড়া হয়েছে। নির্বাচনে হার-জিত্‍ আছে। কিন্তু কর্নাটকে ক্ষমতাসীন বিজেপি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। গতবারের তুলনায় ৩৮টি আসন কম পেয়েছে তারা। প্রচারে বিজেপির মুখ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই।কর্নাটকের ভোটের ফল প্রকাশের দু’দিনের মাথায় গডকরির এই মন্তব্যের উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রীই, এমন আলোচনা আছে খাস বিজেপিতেই। এমনিতেই মজার ছলে ইঙ্গিতপূর্ণ রাজনৈতিক কথা বলাতে বেশ নামডাক আছে বিজেপির প্রাক্তন সর্ব ভারতীয় সভাপতি গডকরির। আবার আর এক প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি ভেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতো গডকরিও রাজনীতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণ, আত্মপ্রচারের তীব্র বিরোধী। ধর্মীয় বিভেদ বিচ্ছেদের রাজনীতিতেও তিনি সুর মেলান না কখনও।তিনি আবার একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীরা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেনি কখনও। সব মিলিয়ে মোদী-শাহ জমানার চলতি ঘরানার বিপরীতের মানুষ তিনি। সেই কারণেও তাঁর কথা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।মহারাষ্ট্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে গডকড়ি বলেন, ‘আমি একবার একটা মজার কর্মসূচি নিয়েছিলাম। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি এক কেজি করে মাংস পৌঁছে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেবার জিততে পারিনি। আসলে ভোটাররা খুব চালাক। কেউ কিছু ফ্রি দিলে খেয়ে নেয়। কিন্তু ভোটটা যাঁকে দেওয়ার তাঁকে দেয়।’ভাল কাজই যে ভোটে জেতার একমাত্র চাবিকাঠি ইতিপূর্বে সে কথা বলতে গিয়ে নাগপুরের প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান সাংসদ গডকড়ি ঘোষণা করেছেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে তিনি কাউকে এক কাপ চা’ও খাওয়াবেন না। পোস্টার, হোর্ডিংয়ে নিজের ছবি ছেপে ভোট চাইবেন না। কেন্দ্রীয় এই মন্ত্রীর বক্তব্য কাজের বিনিময়েই ভোট তাঁর প্রাপ্য। ফলে ভোট ভিক্ষা তিনি করবেন না। কিন্তু কেন ছবি ছাপিয়ে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাওয়া নিয়ে সরব এই মন্ত্রী, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে।

Exit mobile version