জনতার কলম ওয়েবডেস্ক:- বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার দুপুরে ঢাকায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই ঘোষিত এ রায়কে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমন করতে নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। একই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তাকে আজীবন কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
রায়ের সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত সরকারি পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাততালি ও উল্লাস দেখা যায়। তবে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ছিলেন অনুপস্থিত; ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।
ট্রাইব্যুনাল দীর্ঘ কয়েক মাস শুনানি শেষে রায় দেয়। প্রসিকিউশন দাবি করে, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সহিংসতায় প্রায় ১,৪০০ মানুষের মৃত্যু ও কয়েক হাজার মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল, যার বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে।
রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আদালতে বলেন, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বেকসুর খালাসের আবেদন জানালেও আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে।
রায় ঘোষণার আগেই এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা দাবি করেন, বিচার প্রক্রিয়া “একটি সাজানো নাটক” ছাড়া কিছু নয়। তার অভিযোগ, এ ট্রাইব্যুনাল একটি অনির্বাচিত প্রশাসন পরিচালনা করছে, যার সদস্যরা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
রায় ঘোষণার আগে থেকেই বাংলাদেশজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছিল। গত কয়েক দিনে দেশব্যাপী অন্তত ৩০টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ২৬টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। যদিও কোনো প্রাণহানি হয়নি, তবুও এ পরিস্থিতি অস্থিরতার ইঙ্গিত দিয়েছে।
রায়ের দিন সকালে থেকেই ঢাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় মোতায়েন ছিল আধাসামরিক বাহিনী। আদালত চত্বর ও আশপাশের এলাকায় ছিল চেকপোস্ট, টহল ও নজরদারি।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন বলেছে, তারা সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। তবে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন স্থিতিশীলতায় ফিরবে কি না, তা এখনই বলা কঠিন।
বাংলাদেশ বর্তমানে বড় এক রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে জাতির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড, অন্যদিকে নির্বাচনের আগে প্রধান রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা—দুটি সিদ্ধান্তই দেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
এখন প্রধান প্রশ্ন হলো, রায়ের পর দেশ কি আরও সহিংসতার দিকে যাবে, নাকি আইনি ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীলতার পথে ফিরে আসবে। আপাতত অপেক্ষা শুধু পরবর্তী পদক্ষেপ ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের।

