ক্ষমতা দখল করা বিজেপির প্রধান লক্ষ্য নয়, মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের সেবা করা : জেপি নাড্ডা
janatar kalam
জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- ত্রিপুরা রাজ্যে দ্বিতীয় দফায় শাসন ক্ষমতা বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে রবিবার আগরতলার আস্তাবল ময়দানে এক প্রকাশ্য সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এদিনের এই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি এবং ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী জে পি নাড্ডা। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আশীর্বাদ এবং অধ্যাপক ডা মানিক সাহার নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিজেপি সরকারের দুই বছরে রাজ্যের সাধারণ মানুষ ব্যাপক ভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
এর আগেও রাজ্যে যে পাঁচ বছর বিজেপি সরকার ছিল তখনও মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করা হয়েছে। তিনি জানান এদিন সমাবেশের ময়দানে উপস্থিত মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা প্রমাণ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাক্তার মানিক সাহা মানুষের আওয়াজ হয়ে উঠেছেন। ২০১৯ এবং ২০২৪ এই দুটি লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের দুটি আসন থেকেই বিজেপি প্রার্থীদের জয়ী করে পার্লামেন্টে পাঠানোর জন্য ভোটারদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। মানুষ বারবার বিজেপিকে আশীর্বাদ করছেন কারণ তারা মানুষের জন্য চিন্তা করেন এবং দিনরাত কাজ করেন।
একেবারে প্রান্তিক এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষদের মধ্যেও যাতে সব ধরনের সরকারি সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায় তার লক্ষ্যে কাজ করছে, তাই এই রাজ্যের মানুষ বারবার বিজেপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবেন। বিরোধীরা এ রাজ্যে আর কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না, কারণ তারা মানুষের কল্যাণে কোন কাজ করেনি। শুধুমাত্র ত্রিপুরা রাজ্যেই নয় সারাদেশেই বিজেপি মানুষের কল্যাণে কাজ করছে তাই বিভিন্ন রাজ্যে পরপর ক্ষমতায় আসছে, গুজরাট রাজ্যে তো বিজেপি টানা ছবার ক্ষমতায় এসেছে।
বিজেপি সরকার গরিব এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের সরকার বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজনীতির প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানান, যে ত্রিপুরা বামেদের রাজত্বের রক্তে লাল হয়ে থাকতো এখন তার পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সরকারের সময় ত্রিপুরা রাজ্যে অপরাধের হার কুড়ি শতাংশ কমে গিয়েছে। অপরাধের তালিকায় নিচের দিক থেকে তিন নম্বর স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এই রাজ্যে। সরকারি অফিসগুলিকে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আধুনিক এবং উন্নত করা হয়েছে।
বিধানসভার সব কাজকর্ম এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হচ্ছে। এই রাজ্যের যে উন্নয়ন হয়েছে তা অটল বিহারী বাজপায়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এবং নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর। সেই সঙ্গে বাম এবং বিজেপির প্রসঙ্গ টেনে তিনি আবারও বলেন তারা প্রকাশ্যে লড়াই করার কথা বললেও ভেতরে ভেতরে তাদের মধ্যে ব্যাপক মিল রয়েছে, যার প্রতিফলন গত নির্বাচনে দেখা গিয়েছে। এ দুটি দল মিলে ত্রিপুরাকে রক্তে লাল করেছিল, প্রতিদিন খুন এবং দর্শনের ঘটনা ঘটতো। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে এ রাজ্যে বহু বিজেপি কার্যকর্তাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে নারীরা রাতের আঁধারেও নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছেন।
বক্তব্যের শেষ লগ্নে তিনি রাজ্য সরকারের দুটি নতুন যোজনার ঘোষণা দেন। এই যোজনা গুলি হল মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা। এর মাধ্যমে বিপিএল পরিবারে জন্ম নেওয়া কন্যা সন্তানকে রাজ্য সরকারের তরফে ৫০ হাজার টাকার বন্ড করে দেওয়া হবে জন্মের পর। এই মেয়েটির ১৮ বছর বয়স হলে ১০ লক্ষ টাকা ফেরত পাবে। যা তার নিজের কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। অপর যোজনা টি হল মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা, এর মাধ্যমে বিভিন্ন বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে পাস করা নম্বরের ভিত্তিতে প্রথম ১৪০ ছাত্রীকে রাজ্য সরকারের তরফে বিনামূল্যে স্কুটি দেওয়া হবে।
সেই সঙ্গে উপস্থিত সকলে মিলে এদিন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা মানিক সাহার নেতৃত্বে পরিচালিত রাজ্য সরকারের দুই বছরের উন্নয়নমূলক কাজের তথ্যসম্বলিত একটি পুস্তিকার আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন। অপরদিকে এদিন জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের মানুষ বর্তমানে বামেদের জিন্দাবাদ সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বাম এবং কংগ্রেস গত ৩৫ বছর তাদের শাসনকালে শুধু বঞ্চনার ক্যাসেট বাজিয়ে গিয়েছে। বিজেপি সরকারের হাত ধরে ত্রিপুরায় এখন ভারতের অন্যতম পরিচিত রাজ্য হিসেবে উঠে এসেছে।
মানুষের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে শুরু করে চাকরি প্রদান সবকিছুতেই স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ করা হচ্ছে। আগে বাম আমলে যতগুলি চাকরি হয়েছে এগুলোতে নানা দুর্নীতি হতো তাই প্রায় প্রতিটি চাকরি নিয়েই আদালতে মামলা হয়েছে। এর উদাহরণ হিসেবে ১০ হাজার ৩২৩ এর কথা বলেন তিনি। বিজেপি সরকার এখন যেমন মানুষের কল্যাণে কাজ করছে আগামী দিনেও একইভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করবে বলেও আশ্বস্ত করেন।
এদিনের এই সমাবেশে জেপি নাড্ডা এবং মানিক সাহার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন তোদের বিজেপি সভাপতি এবং সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় সহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।