জনতার কলম ওয়েবডেস্ক:- উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মোড়—অঞ্চলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে গঠন করল একক আঞ্চলিক রাজনৈতিক মঞ্চ ‘ওয়ান নর্থ ইস্ট’। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির সংবিধান ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই নতুন উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। উপস্থিত ছিলেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)-র সভাপতি কনরাড কে. সাংমা, তিপ্রা মথা প্রতিষ্ঠাতা ও ত্রিপুরার রাজপরিবারের উত্তরসূরি প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মা সহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যের প্রভাবশালী নেতারা।
নতুন দলটির লক্ষ্য—উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্যের জনগণের অভিন্ন কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা। কনরাড সাংমা বলেন, “এটি কেবল একটি নির্বাচনী জোট নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দল, যা উত্তর-পূর্বের উন্নয়ন, স্বশাসন এবং প্রতিনিধিত্বের ঘাটতির মতো দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলির সমাধানে কাজ করবে।”
তিনি আরও বলেন, “আগে বহুবার আঞ্চলিক ঐক্যের চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু সেগুলি কেবল জোট হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিল। এবার আমরা একটি একক দল হিসেবে কাজ করব—এটাই আমাদের প্রকৃত শক্তি।”
তিপ্রা মথা প্রধান প্রদ্যোত দেববর্মা বলেন, “উত্তর-পূর্বের সামনে রয়েছে বহুস্তরীয় সমস্যা—শাসনব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা থেকে শুরু করে সীমান্ত জটিলতা পর্যন্ত। একত্রিত রাজনৈতিক মঞ্চ আমাদের এই সমস্ত বিষয়ে আরও জোরালোভাবে অবস্থান নিতে সাহায্য করবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই দল শুধু উত্তর-পূর্বে বসবাসকারী মানুষদের নয়, দেশের অন্যান্য প্রান্তে থাকা উত্তর-পূর্বের মানুষদেরও প্রতিনিধিত্ব করবে। তাদের বিরুদ্ধে যে বৈষম্য ও অবমাননা দেখা যায়, তার বিরুদ্ধে এই দল লড়বে।”
দলের গঠন ও কাঠামো নির্ধারণের জন্য নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে, যার আহ্বায়ক এনপিপি নেতা জেমস সাংমা। এই কমিটি দলের সংবিধান, নীতিমালা ও সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করবে এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দল ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে।
ভবিষ্যতে জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠলে কনরাড সাংমা জানান, “আমরা স্বাধীনভাবে নির্বাচনে লড়ব। জনপ্রিয় রায় ভাঙা থাকলে, মানুষের স্বার্থে ভবিষ্যতে সহযোগিতার সম্ভাবনা বিবেচনা করা হবে।”
তিনি বলেন, “এটি কেবল রাজনৈতিক জোট নয়, উত্তর-পূর্বের মানুষের আত্মপরিচয়ের লড়াই। আমাদের লক্ষ্য—জাতীয় পরিসরে উত্তর-পূর্বের কণ্ঠস্বরকে সম্মানজনক জায়গা দেওয়া।”
প্রদ্যোত দেববর্মা এই উদ্যোগকে অভিহিত করেন “রাজনৈতিক নয়, আবেগের ঐক্য” হিসেবে। তাঁর কথায়, “দীর্ঘদিন পর উত্তর-পূর্ব এক পতাকার তলায় দাঁড়াচ্ছে। ‘ওয়ান নর্থ ইস্ট’ সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে।”

