Site icon janatar kalam

আমাদের রাজ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গদর্শনে সার্বিক উন্নতির দিকে এগিয়ে চলছে: মুখ্যমন্ত্রী

জনতার কলম ত্রিপুরা আগরতলা প্রতিনিধি :- আমাদের রাজ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গদর্শনে সার্বিক উন্নতির দিকে এগিয়ে চলছে। ত্রিপুরা সরকারের লক্ষ্য হলো এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলা। সেই দিশাতেই রাজ্য সরকার উন্নয়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ তেলিয়ামুড়ার নেতাজী নগরে নবনির্মিত আধুনিক মোটরস্ট্যান্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই কথাগুলি বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রী তেলিয়ামুড়ার নেতাজী নগরে ৪ কোটি ৯০লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে আধুনিকমানের মোটরস্ট্যান্ডের ফলক উন্মোচন করে উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি ভার্চুয়াল মাধ্যমে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে কবি নজরুল বিদ্যাভবন দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের নবনির্মিত বিদ্যালয় ভবন, ৪ কোটি ৪ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত তেলিয়ামুড়া ইংরেজীমাধ্যম দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয় এবং ৪ কোটি ২৪ লক্ষ ৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত তি মুঙ্গিয়াবাড়ি দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্যে উন্নীত হবার পর এই প্রথম তেলিয়ামুড়ায় আধুনিক মানের মোটরস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হলো। অথচ এক শ্রেণীর মানুষ বর্তমানে রাজ্যের উন্নয়ন দেখতে পায়না। তেলিয়ামুড়ার উপর দিয়ে রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে আসা যাওয়ার রাস্তা হলেও একটি ভালো মোটরস্ট্যান্ড ছিলনা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই মোটরস্ট্যান্ড খোয়াই ও তেলিয়ামুড়ার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে, মোটর শ্রমিকগণ উপকৃত হবেন। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার সবকা সাথ সবকা বিকাশে নিরন্তর প্রয়াস জারি রেখেছে। রাজ্য সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ, কৃষি সমস্ত ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। খোয়াই জেলার উন্নয়নে বর্তমান রাজ্য সরকার কি কি উন্নয়নমূলক কাজ করেছে এবং বর্তমানে কি কি কাজ চলছে তার সংক্ষিপ্ত চিত্র তিনি তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে খোয়াই থেকে তেলিয়ামুড়া পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার ২০৮-নং জাতীয় সড়ক নির্মাণ, মুঙ্গিয়াকামী থেকে চম্পকনগর পর্যন্ত চার লেনের জাতীয় সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। খোয়াইয়ে আধুনিক মানের পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে।

খোয়াইয়ে আধুনিক সিন্থেটিক টার্ফ ফুটবল মাঠ, শরৎচন্দ্র দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের নতুন পাকা ভবন, আশারামবাড়ি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের পাকা ভবন নির্মাণ ও আধুনিক মানের ল্যাবরেটোরি, জেলা পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টারের নির্মাণ, তেলিয়ামুড়ায় মহাশ্মশান নির্মাণ ইত্যাদি। এছাড়াও বেহালাবাড়িতে একটি গার্লস হোস্টেল নির্মাণ, খোয়াই জেলা হাসপাতালে আধুনিক ল্যাবরেটোরি, জেলা পরিবহণ ভবন নির্মাণ, জেলাশাসকের কোয়ার্টার, খোয়াই মহকুমা শাসকের কোয়ার্টার, এডিএম কোয়ার্টার ইত্যাদি বহু প্রকল্পের কাজ রূপায়িত হচ্ছে খোয়াই জেলায়।

 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার উন্নয়নমূলক কাজের সাথে সাথে কর্মসংস্থানেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বর্তমান রাজ্য সরকার প্রায় ১৭ হাজার নিয়মিত সরকারি চাকরি প্রদান করেছে স্বচ্ছতা বজায় রেখে। আগামী দিনে আরও প্রচুর সরকারি চাকরি হবে, রাজ্য সরকার প্রক্রিয়া জারি রেখেছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। ধাপে ধাপে শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। উত্তরপূর্ব ভারতে জিএসডিপিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। উন্নয়নে ত্রিপুরা ফ্রন্টরানার স্টেট হিসেবে এগিয়ে চলছে। ত্রিপুরায় ২০১৮ সালের পূর্বে পর্যন্ত মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১ লক্ষ ৪৪৪ টাকা। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। জলজীবন মিশনে মাত্র ৩ শতাংশ বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জলের ব্যবস্থা ছিল। বর্তমান সরকার প্রায় ৮৫ শতাংশ বাড়িতে পাইপ লাইনে জলের ব্যবস্থা করেছে।

এবারের বাজেটে ‘মুখ্যমন্ত্রী শস্য শ্যামলা’ যোজনা নামক একটি নতুন প্রকল্পের সংস্থান রাখা হয়েছে। এই প্রকল্প উচ্চফলনশীল শস্যের উৎপাদনে সহায়ক হবে। এর জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার ‘চিফ মিনিস্টার্স স্কিম ফর মেন্টালি চ্যালেঞ্জেস পার্সন’ নামক একটি প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে মানসিকভাবে দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিরা মাসিক ৫ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। যারা বর্তমানে ২ হাজার টাকা পাচ্ছেন তারা আরও অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা করে পাবেন। অন্ত্যোদয় পরিবারের কন্যা সন্তানের বিবাহের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ‘মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বিবাহ যোজনা’ নামক একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

এই প্রকল্পে রাজ্য সরকার অন্ত্যোদয়ভুক্ত পরিবারের কন্যা সন্তানের বিবাহের জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। তাছাড়া মহকুমাস্তরে গণবিবাহের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে প্যারামিলিটারিদের জন্য ‘চিফ মিনিস্টার্স অ্যাসিস্টেন্স ফর ডটার/সন অব আর্মি/ সিএপিএফ পার্সোনার্স’ নামে একটি নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেছে। দেশের উদ্দেশ্যে প্রাণ উৎসর্গ করা শহীদ পরিবারের অবিবাহিত ও আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল কন্যা ও পুত্র সন্তানদের সামাজিক ভাতা দেবে রাজ্য সরকার। আগরতলায় ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সুপার স্পেশালিটি চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগরতলায় আসা জনসাধারণ শহরে এসে বিভিন্ন কারণে রাত্রিযাপন করতে বাধ্য হন। তাদের থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য আগরতলায় ভারতমাতা ক্যান্টিন তথা নৈশ যাত্রীনিবাস স্থাপন করা হবে।

চলতি অর্থবছরে প্রতিটি মহকুমায় বিজ্ঞান ও ইংরেজী বিষয়ে ভালো পড়াশুনার জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষক দিয়ে কোচিং সেন্টার চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। আগরতলা, উদয়পুর ও আমবাসায় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার সেন্টার চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যানজট এড়াতে আগরতলায় নতুন ২টি উড়াল পুল নির্মাণ করা হবে। ‘চিফ মিনিস্টার্স রাবার মিশনে’ নতুন ২০ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে রাবার চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ১০টি নতুন রাবার প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ৩টি নতুন এসটি গার্লস হোস্টেল এবং ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ৭টি নতুন এসটি হোস্টেল স্থাপন করা হবে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে। রাজ্যের সমস্ত থানাগুলি পর্যায়ক্রমে আধুনিকিকরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে পশ্চিম আগরতলা, পূর্ব আগরতলা, বিলোনীয়া, বাইখোরা, বাগবাসা ও মধুপুর থানার নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।

এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়তে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর এবং এই লক্ষ্যে আগামীদিনেও উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী সকল অংশের জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানের সন্মানিত অতিথি পরিবহণ, পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, রাজ্য সরকার রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে উন্নয়নের কাজ করে চলছে। পরিবহণ ক্ষেত্রে বর্তমানে রাজ্যে ২৪২ কোটি টাকার পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। যার মধ্যে রয়েছে জিরানীয়া, কল্যাণপুর, বিশালগড়, মোহনপুর, মেলাঘর, জোলাইবাড়িতে আধুনিক মোটরস্ট্যান্ড নির্মাণ। খোয়াই, সিপাহীজলা, দক্ষিণ ত্রিপুরা ও উত্তর ত্রিপুরায় জেলা পরিবহণ ভবন নির্মাণ। এজাড়াও মনুঘাট ও যতনবাড়িতে নতুন মোটরস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হবে। রাজ্য সরকার শি ক শুরু করে স্বাস্থ্য সমস্ত দিক দিয়ে উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার মানে সিবিএসসি প্যাটার্নে সিলেবাস চালু করেছে এবং বহু বিদ্যালয়কে সিবিএসসি’র আওতায় এনেছে যাতে রাজ্যের ছেলে মেয়েরা জাতীয়স্তরে নিজেদের মেলে ধরতে পারে।

জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, রাজ্যে বর্তমানে আক্ষরিক অর্থে উন্নয়ন হচ্ছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হল সবার উন্নয়ন। ত্রিপুরা বিধানসভার সরকারি মুখ্যসচেতক বিধায়ক কল্যাণী সাহা রায় বলেন, আজ তেলিয়ামুড়ার ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল দিন। এই ধরণের মোটরস্ট্যান্ডের জন্য তেলিয়ামুড়াবাসীকে দীর্ঘ বছর অপেক্ষা করতে হল। মুখ্যসচেতক বলেন, রাজ্যে বর্তমান সরকারের সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খোয়াই জিলা পরিষদের সভাধিপতি অপর্ণা সিংহ রায়, তেলিয়ামুড়া পুর পরিষদের সদস্য অচিন্ত্য ভট্টাচার্য, পরিবহণ দপ্তরের সচিব সি কে জমাতিয়া, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা নৃপেন্দ্র চন্দ্র শর্মা প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তেলিয়ামুড়া পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন রূপক সরকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন খোয়াই জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা রজত পন্থ।

Exit mobile version