জনতার কলম আগরতলা প্রতিনিধি :-আগরতলা পুর নিগমের ১৬কোটি টাকার জালিয়াতি কাণ্ডে নতুন মোড় নিয়েছে তদন্ত। পশ্চিম আগরতলা মহিলা থানার পুলিশ এই ঘটনায় ইউকো ব্যাঙ্কের এক মহিলা কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত ওই মহিলা ব্যাঙ্ক কর্মীর নাম রামায়নী শ্রীময়ী, যিনি আগরতলা শাখার ক্যাশিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি আসামের নোয়াগাঁও। পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে এবং রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে। এই ঘটনা ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
এই জালিয়াতি কাণ্ডটি প্রকাশ্যে আসে যখন ইউকো ব্যাঙ্কের মাসিক রিপোর্টে আর্থিক গরমিল ধরা পড়ে। রিপোর্টে দেখা যায়, আগরতলা পুর নিগমের ১৬ কোটি টাকা চারটি পর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, হায়দ্রাবাদের একটি তথাকথিত সংস্থা এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। এই ঘটনায় পুর নিগমের কোনো কর্মীর সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছিলেন আগরতলার মেয়র দীপক মজুমদার। তবে, এই দাবি সত্ত্বেও জনমনে সন্দেহ এবং উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে পশ্চিম আগরতলা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ এই মামলার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা এসআইটি) গঠন করে। এই দলটি তদন্তে নেমে বিভিন্ন ক্লু সংগ্রহ করে এবং অবশেষে রামায়নী শ্রীময়ীকে গ্রেফতার করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব নাথ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, এই জালিয়াতি কাণ্ডে ইউকো ব্যাঙ্কের আগরতলা শাখার ক্যাশিয়ার রামায়নী শ্রীময়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি যে এই জালিয়াতির সঙ্গে ওই মহিলা ব্যাঙ্ক কর্মীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করা হয়েছে এবং আমরা তার রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছি। তদন্ত এখনো চলছে এবং আমরা এই কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তি বা সংস্থার খোঁজে রয়েছি।”
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই জালিয়াতি কাণ্ডটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে। হায়দ্রাবাদের ওই তথাকথিত সংস্থাটি পুর নিগমের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানোর জন্য জাল নথি এবং সম্ভবত ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ সহযোগিতার সুযোগ নিয়েছে। চারটি ধাপে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তরিত হয়েছে, যা ব্যাঙ্কের মাসিক রিপোর্টে ধরা পড়ার আগে কেউ লক্ষ্য করেনি। এই ঘটনা ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং তদারকির দুর্বলতার বিষয়টিকেও সামনে এনেছে।
এই ঘটনা আগরতলার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পুর নিগমের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থার অর্থ জালিয়াতির শিকার হওয়া জনগণের আস্থার উপর আঘাত করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে এত বড় অঙ্কের টাকা এত সহজে হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব হলো। স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।